মোঃ রোমান- ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরে এখনো হয়নি ভাইরাসের পরীক্ষার ব্যবস্থা। এ অবস্থায় করোনা সন্দেহে এখানকার আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়ার রোগীদের ভরসা এখনো ঢাকামুখী। অনেক রোগীকে এজন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে হচ্ছে। আবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনেকের নমূণা ঢাকায় পাঠিয়ে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
এতে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা করোনা সন্দেহভাজনদের ভোগান্তির পাশপাাশি আতঙ্ক কাটছে না এখানকার দ্বায়িত্বরত চিকিৎসকদের। তারা বলছেন, করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীরা আসলেই করোনা আক্রান্ত কিনা সেটি নিশ্চিত না হওয়ায় করোনা আক্রান্ত নন এমন রোগীদের কাছে যেতেও তারা বিব্রত বোধ করছেন। এতে নির্বিশেষে ভোগান্তিতে পরেছেন এখানকার অধিবাসীরা।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করেনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গত মার্চ মাসের আগেই এখানো একটি পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করা হয়। এপর্যন্ত এখানে পাঁচজন করোনা ভাইরাস সন্দেহভাজনকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তারা প্রকৃতই করোনা আক্রান্ত কিনা সেটি পরীক্ষার ব্যবস্থা না হওয়ায় বিপাকে পরেন কর্মরত চিকিৎসকেরা। প্রথম পর্যায়ে ভর্তি হওয়া দু’জনের একজন ছিলেন একজন মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র ও অপরজন একটি ১৩ বছরের শিশু। তারা দু’জনেই এখানে কোন ভরসা না পেয়ে ঢাকায় নিজ উদ্যোগে রোগীদের ঢাকায় নিয়ে যান।
গত ২৫ মার্চ করোনা সংক্রমনের ঝুঁকির প্রেক্ষিতে সরকার সকলকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দেয়ার পরপরই ফরিদপুরের প্রায় সবক’টি বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সাধারণ রোগীদেরও চিকিৎসা প্রদান একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায়। অনেক চিকিৎসক তাদের প্রাইভেচ চেম্বারের সামনে নোটিশ টাঙিয়ে রোগী দেখা বন্ধ করে দেন। সরকারী হাসপাতালগুলোতে এসময় থেকে সাধারণ রোগীরা ডাক্তার না পেয়ে অনেকে ফিরে আসেন। তবে অপারেশনের রোগীসহ এখনো অনেকে চিকিৎসা না পেয়ে বিপাকে পরেন।
ফরিদপুরের সদর আসনের সংসদ সদস্য ও এলজিআরডি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ প্রেক্ষিতে ফরিদপুরের চিকিৎসকদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখার জন্য তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানান। পাশাপাশি তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করেন। তাকে তখন জানানো হয়েছিলো, সরকার এব্যাপারে শিঘ্রই পদক্ষেপ নিবে।
ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ফরিদপুরের সাধারণ রোগীদের দুর্ভোগের নিরসণে জেলার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরী বৈঠক করেন। তার এ প্রচেষ্টার পর বর্তমানে কিছু কিছু চিকিৎসক অবশ্য সীমিত আকারে চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু করেছেন। তবে এখনো ফরিদপুরে করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের পরীক্ষার ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও হাসপাতাল মালিকদের সাথে এব্যাপারে কথা প্রসঙ্গে তারা জানান, নিজেদের সুরক্ষার পাশাপাশি এখানে করোন ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পরীক্ষার ব্যবস্থা না হওয়ার কারণেই মূলত: চিকিৎসকগণ একপ্রকার শঙ্কায় রয়েছেন।
ফরিদপুরের বেসরকারী একটি হাসপাতালের মালিক মহসিন শরীফ বলেন, ফরিদপুরে এখনো করোনা ভাইরাস সনাক্তের কোন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। একারণে ফরিদপুরের চিকিৎসকদের মাঝে এধরনের কোন শঙ্কা বিরাজ করছে। তাদের কাছে ঠান্ডাজনিত কোন রোগী আসলে তারা তার চিকিৎসা করতে বিব্রত রোধ করছেন। এ পরিস্থিতির অবসান হতে হলে এখানে করোনা সনাক্তের পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। তিনি দাবি করেন, অবিলম্বে ফরিদপুরে করোনা রোগে যেসব সন্দেহভাজন রোগী আসছেন তাদের যেনো ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকেই শিঘ্রই পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুর রহমান বলেন, আমরা গত মাসেই করোনার জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করে এখানে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় চাহিদা পত্র প্রেরণ করেছি।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা চেষ্টা করছি খুব দ্রুতই ফরিদপুরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে। ফমেক হাসপাতালে করোনা টেষ্টের জন্য প্রয়োজনীয় স্থানও পরিদর্শন করেছি। আশা করছি আগামী পনের দিনের মধ্যে ফরিদপুরে করোনা ভাইরাসে সন্দেহভাজনদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারবো।
বর্তমানে (শনিবার) ফমেক হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে কোন রোগী ভর্তি নেই। করোনা আক্রান্ত সন্দেহে মধুখালী উপজেলা হতে গত মঙ্গলবার রাতে ফমেক হাসপাতালে ভর্তি করা স্বামী-স্ত্রী করোনা আক্রান্ত নন বলে জানা গেছে। গত বুধবার সকালে তাদের শারিরীক বিভিন্ন নমূনা ঢাকার আইসিডিআরে পাঠানোর পর আজ শনিবার ঢাকা হতে রিপোর্ট নেগেটিভ পাওয়া যায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। (সুত্র ফরিদপুরে টাইমস)