মোঃরোমান- ফরিদপুরপ্রতিনিধি 

প্রতিটি ধাপে ধাপে সুচিন্তিত ভাবে গোছালো পরিকল্পনার চাদরে আগলে রেখে ফরিদপুরবাসীকে নিরাপদ রাখার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে চলছেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। জেলার প্রতিটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠানকে করোন ভাইরাস প্রাদুর্ভাব মোকবেলায় ব্যবহারের পারঙ্গমতা দেখিয়ে করনো ভাইরাস মুক্ত ফরিদপুর রাখার প্রত্যয়ে তিনি কাজ করছেন।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জনসচেতনতা, কর্মহীন, অসহায় এবং সব শ্রেনি পেশার মানুষকে নিজ ঘরে নিরাপদে রাখতে কঠোর ভূমিকায় পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ে দিনরাত কাজ করে চলছেন জেলা প্রশাসক।  

আর এই দিকটা বিবেচনা করি তাহলে বলতে হবে এখনো ফরিদপুরে করোনা রোগি শনাক্ত হয়নি। আর সামনে যদিও হয় সেদিক বিবেচনা করে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগকে তিনি ঢেলে সাজিয়ে রেখেছেন। সন্দেহভাজন করোনা ভাইরাস সহ যে কোন রোগের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরনে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হয়েছে এবং চিকিৎসকদের সমন্বয়ে তিন স্তরবিশিষ্ট চিকিৎসাব্যবস্থার গড়ে তোলা হয়েছে। যদি কোন ব্যক্তি উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় তা জানানোর জন্য হটলাইন খোলা হয়েছে।

জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের তার নেয়া প্রস্তুতি তুলে ধরে তিনি বলেন, জেলায় বিদেশ থেকে আসে এই প্রাদুর্ভাব কালিন সময়ে ৪হাজার ৬শত ৭৭জন। আর এই বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের মাঝে হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয় মোট ১হাজার ৮শত ৮জন এবং এর ভিতর ১হাজার ৬শত ২১ জন কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা শেষ করেছেন। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাচঁ জন আইসোলেশনে রয়েছেন। এ পর্যন্ত ঢাকায় নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে ৬১ জনের। এর মধ্যে ৩৬ জনের নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে। বাকিদের রির্পোট এখনো আসেনি।

জেলাতে উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স সহ বিভিন্ন স্তরে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৪৪০ সেট পিপিই এবং ৯ হাজার ৭৩৩ টি মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া মজুদ রয়েছে ৪ হাজার ৬৪০ সেট পিপিই ও ৬ হাজার ১৭ টি মাস্ক।

কোভিড-১৯ চিকিৎসায় প্রাথমিকভাবে ১০০ টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ৮৭ জন ডাক্তার ও ৯৭ জন নার্স প্রস্তুত রয়েছেন। কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির জরুরি চিকিৎসায় স্থানান্তরের জন্য ০৩টি এ্যাম্বুলেন্সে পৃথকভাবে চিহ্নিত করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সার্বিকভাবে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সম্ভাব্য যে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা সম্ভব তার প্রায় সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।

একটি বিশেষ সংবাদ দিয়ে তিনি বলেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে সম্ভাব্য করোনা রোগীদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা সম্ভব হবে এবং কোন ব্যক্তির সুচিকিৎসার প্রয়োজন হলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রক্ষিত ১৬ টি আইসিইউ এর মাধ্যমে সেবা প্রদান করাও সম্ভব হবে।

ইতোমধ্যে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ হয়েছে আগামী দুএকদিনের মধ্যেই ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ পরিপূর্ণভাবে সেবার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত ফরিদপুরে সার্বিক পরিবেশ ভালো রয়েছে।

সর্বশেষ তিনি বলেন ফরিদপুর মেডিকেলে নষ্ট থাকা ১৬টি ভেন্টিলিটার খুব দ্রæত তৈরি হয়ে যাবে। এতে করে আমাদের ভেন্টিলিটার নিয়ে যে সমস্যা ছিলো তার দূর হয়ে যাবে এই সপ্তাহে।


ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে যেখানে দেশের অনেক জায়গায় বিভিন্ন নয়ছয়ের কথা প্রচার হচ্ছে গণমাধ্যমে তখন তিনি শক্ত হাতে ত্রাণের কার্যক্রম সঠিকভাবে বিতরণ করে চলছেন। এক্ষেত্রে তার সকল দপ্তরকে তিনি দেখভালোর কাজে লাগিয়েছেন। 

তিনি নিজে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বাড়ি বাড়ি ঘুড়ে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করার সাথে সাথে নিজেও জেলার বিভিন্নস্থানে হতদরিদ্র পরিবারের কাছে ছুটে যান খাদ্য সামগ্রী নিয়ে। তার এই মহতি উদ্যোগ ব্যাপক মাত্রায় সারাদেশে আলোরিত হয়।   

এ বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে জেলায় গ্রহণ করা হয়েছে ওয়াার্ড ভিত্তিক মানবিক সহায়তা কার্যক্রম (ত্রান বিতরণ ও নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচি), নিরাপত্তা তথা সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। এছাড়াও সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর আওতায় প্রদত্ত সকল ভাতা যথাযথভাবে উপকারভোগীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির অধীনে ইউনিয়ন এবং পৌরসভায় ১০ টাকা কেজি মূল্যে খাদ্যশস্য (চাল) বিতরণ, উপকারভোগীদের মাঝে ভিজিডি বিতরণসহ নানামুখী কার্যক্রম।

এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠন শহর আওয়ামীলীগ সহযোগিতায় ফরিদপুর পৌরসভায় প্রথম পর্যায়ে নেয়া ১৫ সহস্রাধিক মানুষের মাঝে মানবিক সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। তাদের সাথে আমাদের ত্রাণ বিতরণের সমন্বয় করা হচ্ছে। এছাড়া জেলা যুবলীগের মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় অত্যাবশ্যকীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার জন্য শহরের ২৭ টি ওয়ার্ডে ট্রাক এর মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে খাদ্যশস্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

বিভিন্ন এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রদত্ত মানবিক সহায়তাও জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ের মাধ্যমে দুস্থ এবং হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, জেলা সদরে এবং প্রত্যেকটি উপজেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে নিরন্তর ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে বাজার ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় জনসমাগম বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সরকার ঘোষিত সন্ধ্যা ৬ টার পরে কোন লোক যেন বাইরে না থাকতে পারে সে বিষয়ে সর্বাতœক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক কর্মহীন লোকদের সহায়তার বিষয়ে বলেন, জেলা সদরসহ জেলার মোট ৯ টি উপজেলায় এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ৬৯৮ টি পরিবারের মধ্যে সরকারি ভাবে প্রায় ৩০০ মে.টন চাল ও নগদ ২০ লক্ষ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এখনো ৩ শত ৫৯ মে.টন চাল ও ১২ লক্ষ ৪৪ হাজার ১৩০ টাকা মজুদ রয়েছে।

ত্রাণ কার্যক্রমের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেলা প্রশাসক বলেন, ইউনিয়ন ও পৌরসভার অতিদরিদ্র ও দুঃস্থ ব্যক্তিদের মাঝে ওয়ার্ড ভিত্তিক তালিকা করে মানবিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। কেউ এই তালিকার বাইরে থাকলে বা অতি প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা না পেয়ে থাকলে সরাসরি হটলাইন ০১৭০১৬৭০০০৮ নম্বরে যোগাযোগ করলে জেলা প্রশাসন ফরিদপুরের টিম পৌঁছে যাচ্ছে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে।

হট লাইনের মাধ্যমে এ পর্যন্ত নিম্নমধ্যবিত্ত মধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্র সহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় দেড় হাজার মানুষের মাঝে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে এবং এখনো অব্যাহত রয়েছে। এই কার্যক্রম সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান। এর বাইরেও প্রতিবন্ধী, হিজড়া, জেলে, বেদে, কুমার, শীল সম্প্রদায় ও বাউলসহ বিশেষ শ্রেনি পেশার নানা মানুষের মাঝে আলাদাভাবে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

জেলা প্রশাসক অতুল সরকার এরই মাঝে জেলার গাদাগাদি করে থাকা হাট বাজার গুলোকে সামজিক দুরত্ব নিশ্চিত কল্পে বিভিন্ন খোলা মাঠে স্থান্তান্তরের নির্দেশ দিয়ে সড়িয়ে দিয়েছেন। বাকি গুলোও খুব দ্রæত খোলা মাঠে নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

তার এসব মহতি উদ্যোগের জন্য ফরিদপুরের সব শ্রেনি পেশার মানুষ তাকে সাধুবাদ দিয়ে বলেছেন তার মতো একজন মানবিক জেলা প্রশাসক পাওয়া যেকোন জেলার জন্য গর্বের। একই সাথে জেলাবাসির একটি নিশ্চিত ঘুমে রাত কাটানোর এখন বড় বন্ধু জেলা প্রশাসক অতুল সরকার।সূত্র-জেলা প্রশাসন ফরিদপুর