মোঃ রোমান ফরিদপুর প্রতিনিধি

বৃহত্তর ফরিদপুরের বিখ্যাত স্থানসমূহের মধ্যে বাইশরশি জমিদার বাড়ির নাম ইতিহাসখ্যাত। ফরিদপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে বর্তমান আটরশির বিশ্ব জাকের মঞ্জিল দরবার শরীফের কাছাকাছি সদরপুর উপজেলার মধ্যে অবস্থিত বাইশরশি জমিদার বাড়িটি। এককালে প্রতাপশালী বাইশরশি জমিদাররা ফরিদপুর-বরিশালসহ ২২টি পরগনার বা জোত মহলের অধিপতি ছিলেন। জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি তখনকার দিনে বাইশরশির বাড়িটির প্রায় ৫০ একর জমি নিয়ে বাগানবাড়ি, পুকুর, পূজামণ্ডপ ও দ্বিতলা বিশিষ্ট ছোট-বড় ১৪টি দালান কোঠা দিয়ে ঢেলে সাজিয়ে ছিলেন। যা আজ ভগ্নদশায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।

জানা গেছে, ১৭শ শতাব্দির গোড়ার দিকে এককালের লবণ ব্যবসায়ী সাহা পরিবার বিপুল অর্থ সম্পতির মালিক হয়ে কয়েকটি জমিদারি পরগনা কিনে জমিাদারি প্রথার গোড়া পত্তন শুরু করেন। ১৮শ শতক থেকে ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের আগ পর্যন্ত জমিদার পরিবারটি অনেক ধন সম্পতির মালিক হন ও ২২টি জমিদারি পরগনা ক্রয় করে বিশাল জমিদার হিসেবে ভারতবর্ষে খ্যাতি লাভ করেন।

১৯৫০ সালে জমিদারী প্রথা লোপ ও প্রজাস্বত্তর আইন প্রনয়ন হবার পর সুকুমার বাবু ছাড়া বাবুদের সবাই কলকাতা চলে যান; এসময় সুকুমার বাবু অর্থহীন এবং বিত্তহীন হয়ে পড়লে জমিদারী হারিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ব্যবসায় লোকশান ও বাড়ীর দাসী কর্তৃক সঞ্চিত স্বর্ণ খন্ডাদী চুরি হওয়ায় ও দাসীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের কারণে দাসী গর্ভবতী হয়ে পড়লে ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় উপায়ন্তর না পেয়ে সুকুমারবাবু নিজে বন্দুকের গুলীতে আত্মহত্যা করেন।

[উল্লেখ্য যে, সুকুমার বাবু ১৯৩৪-১৯৪৬ পর্যন্ত সদরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।]

এরপর বাড়িটির আর কোন অভিভাবক না থাকায় বাড়িটি পরিত্যক্ত হিসেবে গণ্য হয়। বর্তমানে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর জমিদার বাড়িটির অবস্থান হলেও চারপাশের অনেক জমি ভূমিদুস্যুরা দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে ৫টি সান বাধানো পুকুর, বিশাল বাগানবাড়ি ও ছোট বড় চৌদ্দটি কারুকার্য খচিত দালান কোঠা জমিদারদের কালের সাক্ষী হিসেবে দাড়িয়ে আছে।

সরকার একটু নজর দিলে এটি হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।