মায়ের গর্ভ হয়েই পৃথিবীতে সব মানুষের আগমন। তাই গর্ভকালে মায়ের শারীরিক পরিচর্যা অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ একটি সুস্থ বাচ্চার জন্য গর্ভবতী মায়ের সুষ্ঠু পরিচর্যা অত্যাবশ্যক। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে মারিয়ম (আ.)-এর গর্ভাবস্থার বর্ণনার মধ্য দিয়ে গর্ভবতী মায়ের পরিচর্যার নানা দিক তুলে ধরেছেন। এবং পরবর্তীকালে চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলোকেও এ বিষয়গুলো প্রতীয়মান হয়েছে।

সুরা মারিয়ামের ২৪-২৬ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘মহান আল্লাহর নির্দেশে জিবরাইল (আ.) তাঁকে অর্থাৎ মারিয়াম (আ.)-কে ডেকে বলেন, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আপনার প্রভু আপনার পায়ের তলদেশ থেকে একটি প্রস্রবণ প্রবাহিত করবেন। আর আপনি খেজুরগাছের কাণ্ড ধরে নিজের দিকে ঝাঁকাতে থাকুন। এতে আপনার ওপর পরিপক্ব খেজুর পতিত হবে। এবং আপনি খাবার ও পানীয় গ্রহণ করুন এবং আপনার চক্ষু শীতল রাখুন।’

আলোচ্য আয়াতগুলোতে গর্ভবতী মায়ের শারীরিক পরিচর্যার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে। নিম্নে তার কয়েকটি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো—

চিন্তামুক্ত থাকা : গর্ভকালে যেকোনো প্রকার দুশ্চিন্তা প্রসূতি ও নবজাতকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। চিকিৎসাশাস্ত্র মতে, গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মানসিক চাপ নবজাতকের স্নায়ুতন্ত্রের ওপর এতটাই খারাপ প্রভাব ফেলে যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্তান বিকলাঙ্গ হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া রয়েছে অকালগর্ভপাতের ঝুঁকি। পবিত্র কোরআনের অন্যত্র এদিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে কিয়ামতের দিনের বিভীষিকাময় পরিস্থিতি দেখে গর্ভবতী নারীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। সুতরাং গর্ভবতী মায়ের জন্য এই সময়টাতে একেবারেই চিন্তামুক্ত থাকার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘(হে মারিয়াম) আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।’ (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ২৪)

সহনীয় পরিশ্রম করা : গর্ভাবস্থায় বিশ্রামের পাশাপাশি সহনীয় মাত্রায় শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত। চিকিৎসকদের মতে, এতে নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়ে এবং প্রসবকালীন বেদনা সহজ হয়। মারিয়াম (আ.)-এর গর্ভাবস্থায় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে খেজুরগাছের কাণ্ড ধরে ঝাঁকাতে নির্দেশ করা হয়। অথচ যে মহান আল্লাহ পিতা ছাড়াই মারিয়ামের গর্ভে সন্তান দান করলেন, তিনি কি খেজুরগাছের কাণ্ড ধরে ঝাঁকানো ছাড়া তাঁকে খেজুর খাওয়াতে পারতেন না? অবশ্যই পারতেন। তথাপি তাঁকে নির্দেশ করা হয়েছে, ‘আর আপনি খেজুরগাছের কাণ্ড ধরে নিজের দিকে ঝাঁকাতে থাকুন। এতে আপনার ওপর পরিপক্ব খেজুর পতিত হবে।’ (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ২৫)

পানি  খেজুর : মারিয়াম (আ.)-এর গর্ভাবস্থায় তাঁর আশপাশে কেউ ছিল না। সম্পূর্ণ ঐশী নির্দেশনায় তাঁর সেবা-শুশ্রূষা ও দেখাশোনার কাজ পরিচালিত হচ্ছিল। এ সময় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পাকা খেজুর আর প্রস্রবণের বিশুদ্ধ পানিই ছিল তাঁর প্রধান খাদ্য। চিকিৎসাবিজ্ঞান মতে, গর্ভের সন্তানের দৈহিক গঠন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে খেজুর অত্যন্ত সহায়ক।

সঠিকভাবে খাবার গ্রহণ : এ সময় সাধারণত মায়েদের খাবারগ্রহণ ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন দেখা দেয়। শারীরিক অস্থিরতা ও বমি বমি ভাব অনুভব করেন অনেকেই। এতে খাওয়া-দাওয়ার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মারিয়াম (আ.)-কে ঐশী নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, ‘তুমি ঠিক মতো খাও এবং পান করো।’ (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ২৬)

প্রফুল্ল  সতেজ থাকা : নবাগত সন্তানের কথা চিন্তা করতেই নানা চিন্তা-পেরেশানিতে বুক ভারী হয়ে ওঠে মায়ের। মারিয়াম (আ.)-ও ছিলেন এমনই এক কঠিন দুশ্চিন্তার শিকার। বাবা ছাড়াই সন্তান হতে চলেছে। লোকে কী বলবে? কিভাবে সমাজে মুখ দেখাবেন? এই সন্তানের পরিচয় কী হবে? আর কত দুশ্চিন্তা! ঠিক এ সময় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে তাঁকে একদম প্রফুল্ল ও সতেজ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হলো। কোরআনের ভাষায়, ‘আপনার চক্ষু শীতল রাখুন।’ (সুরা : মারিয়াম, আয়াত ২৬)। অর্থাৎ সব ধরনের  চিন্তা-পেরেশানি ঝেড়ে ফেলে প্রফুল্লচিত্তে দিন যাপন করতে থাকুন।