প্রকৃত মুমিন বান্দাদের জীবনের লক্ষ্য থাকে মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। কারণ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার মধ্যে রয়েছে যাবতীয় সফলতা। অনেক মানুষ এমন আছে, যারা দুনিয়াতে অনেক আমল করে, কিন্তু আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট নয়, অথচ তার ধারণা সে অনেক ভালো আমল করছে। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন : ‘বলুন, আমি কি তোমাদের সেসব লোকের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। তারা সেসব মানুষ, যাদের প্রচেষ্টা পার্থিব জীবনে পণ্ড হয়, অথচ তারা মনে করে যে তারা সৎকর্ম করেছে।’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ১০৩-১০৪)। নিম্নে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির মাপকাঠি তুলে ধরা হলো—
যখন কারো ভালো কাজের সুযোগ হয়, তখন বুঝতে হবে আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ কাউকে সৎপথে পরিচালিত করতে চাইলে তিনি তার হৃদয়কে ইসলামের জন্য খুলে দেন, (আবার) যাকে তিনি বিপথগামী করতে চান তার হৃদয়কে অতিশয় সংকীর্ণ করে দেন; তার কাছে ইসলাম অনুসরণ আকাশে আরোহণের মতো দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে…।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১২৫)
উল্লিখিত আয়াত সম্পর্কে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা তাঁর সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত ব্যক্তির হৃদয় প্রশস্ত করে দেন, ফলে সে তাওহিদে দৃঢ়বিশ্বাসী হয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
এদিকে লক্ষ করা উচিত যে মহান আল্লাহ আমার দ্বারা কোন ধরনের কাজ করাচ্ছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা সৎপথে চলবে, আল্লাহ তাআলা তাদের এ (সৎপথে) চলা আরো বাড়িয়ে দেন এবং তাদের মুত্তাকি হওয়ার শক্তি দান করেন।’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ১৭)। যারা আল্লাহর পথে চলতে চায়, আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট। তিনি তাদের তাঁর পথে চলা সহজ করে দেন।
ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আমার পথে প্রাণপণে চেষ্টা করে, আমি অবশ্যই তাদের আমার পথে পরিচালিত করি।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)। ভালো কাজের সুযোগ পাওয়া আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি লক্ষণ। আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যদি তাঁর কোনো বান্দার কল্যাণ করার ইচ্ছা করেন তাহলে তাকে কাজ করার তাওফিক দেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি কিভাবে তাকে কাজ করার তাওফিক দেন? তিনি বলেন, তিনি সেই বান্দাকে মৃত্যুবরণ করার আগে সৎকাজের সুযোগ দান করেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৪২)
ভালো সঙ্গী, সহচর, বন্ধু, কর্মচারী, সহযোগী পাওয়া আল্লাহর সন্তুষ্টির একটি লক্ষণ।
বর্তমান সমাজের অনেক মানুষ এমন রয়েছে যাদের ভালো কাজের সদিচ্ছা রয়েছে, কিন্তু তাদের সহচররা তাদের মঙ্গল কামনা করে না। এটি আল্লাহর অসন্তুষ্টি কারণ। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের কল্যাণের ইচ্ছা করলে তার জন্য একজন সৎ মন্ত্রীর ব্যবস্থা করেন। রাষ্ট্রপ্রধান ভুল করলে সে তা স্মরণ করিয়ে দেয়। আর তার স্মরণ থাকলে মন্ত্রী তাকে সহযোগিতা করেন। আর আল্লাহ তার অকল্যাণ চাইলে একজন খারাপ লোককে তার মন্ত্রী নিযুক্ত করেন। সে (আল্লাহর নির্দেশ) ভুলে গেলে মন্ত্রী তাকে তা স্মরণ করিয়ে দেয় না, আর তার স্মরণ থাকলে সে তাকে সহযোগিতা করে না। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৯৩২)
যাকে আল্লাহ ভালোবাসেন তাকে মানুষের মনে জায়গা করে দেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন তখন তিনি জিবরাঈল (আ.)-কে ডেকে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালোবাসেন, কাজেই তুমিও তাকে ভালোবাসো। তখন জিবরাঈল (আ.) তাকে ভালোবাসেন। অতঃপর জিবরাঈল (আ.) আকাশের অধিবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালোবাসেন। কাজেই তোমরা তাকে ভালোবাসো। তখন আকাশের অধিবাসীরা তাকে ভালোবাসতে থাকে। অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে সম্মানিত করার ব্যবস্থা করা হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৩২০৯)।
লেখক : শিক্ষক, জামিয়া বাবুস সালাম, বিমানবন্দর ঢাকা।