মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা   

প্রত্যেক মুসলমানই চায় তার ইবাদতগুলো মহান আল্লাহর কাছে কবুল হোক। কিন্তু শয়তানের ধোঁকায় পড়ে সামান্য ভুলের কারণে অনেক সময় তাদের ইবাদতগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। আজ আমরা আলোচনা করব এমন কিছু বিষয় নিয়ে, যেগুলো ইবাদত কবুল হওয়ার শর্ত।

ইসলাম

মহান আল্লাহর দরবারে বান্দার ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত ইসলাম। যে ইসলাম গ্রহণ করেনি, যার ঈমান নেই, তার ইবাদত মহান আল্লাহর কাছে কবুলযোগ্য নয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই ইসলামই মহান আল্লাহর কাছে একমাত্র (মনোনীত) ধর্ম।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯)

ইখলাস

শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় যাবতীয় কাজ সম্পাদনের নামই ইখলাস। ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার জন্য ইখলাস পূর্বশর্ত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তাদের শুধু এ নির্দেশই প্রদান করা হয়েছিল যে তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁরই জন্য দ্বিনকে একনিষ্ঠ করে এবং নামাজ কায়েম করে ও জাকাত প্রদান করে। আর এটাই সঠিক দ্বিন। (সুরা : বায়্যিনাহ, আয়াত : ৫)

ইবাদতে পরিপূর্ণ ইখলাস ধরে রাখতে কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যে বিষয়গুলো ইবাদতের ইখলাস ধ্বংস করে দেয়।

১. রিয়া : লোক-দেখানো ইবাদতকে রিয়া বলা হয়। এটি ইবাদতকে ধ্বংস করে দেয়। রাসুল (সা.) একে গোপন শিরক বলে আখ্যা দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি আমার উম্মতের জন্য যেসব বিষয়ে ভয় করি, তার মধ্যে অধিক আশঙ্কাজনক হচ্ছে, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা। অবশ্য আমি এ কথা বলছি না যে তারা সূর্য, চন্দ্র বা প্রতিমার পূজা করবে; বরং তারা আল্লাহ ছাড়া অপরের সন্তুষ্টির জন্য কাজ করবে এবং গোপন পাপ করবে (লোক-দেখানো ইবাদত করবে)।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২০৫)

কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয় সে গোপন শিরক কী? তিনি বলেন, রিয়া।

২. সুমআ : অর্থাৎ ইবাদত করে তা মানুষের কাছে বলে বেড়ানো। মানুষকে সর্বদা নিজের ইবাদতের ফিরিস্তি শোনানো। এটিও ইবাদতকে ইখলাসশূন্য করে দেয়। ফলে ইবাদত ধ্বংস হয়ে যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি লোক-শোনানো ইবাদত করে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার লোক-শোনানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৯৯)

৩. পার্থিব উদ্দেশ্যে ইবাদত : জাগতিক জীবনে উপকৃত হওয়ার উদ্দেশ্যে ইবাদত আল্লাহর দরবারে মূল্যহীন। এটি মুনাফিকদের কাজ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে। বস্তুত তিনি তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন। আর যখন তারা নামাজে দাঁড়ায় তখন অলসতার সঙ্গে দাঁড়ায়, শুধুমাত্র লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৪২)

ইত্তেবা বা কোরআন-সুন্নাহর অনুসরণ

ইবাদতকে মহান আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে তা করতে হবে কোরআন ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী। মনগড়া ইবাদত মহান আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় নয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোনো বিষয়ে ফয়সালা দিলে কোনো মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য সে বিষয়ে তাদের কোনো (ভিন্ন সিদ্ধান্তের) এখতিয়ার সংগত নয়। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অমান্য করল সে স্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হলো।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৬)

সুতরাং মুমিনের প্রতিটি কাজই হবে রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী। তাহলেই তা মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হবে।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে উপরোক্ত বিষয়গুলো মোতাবেক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।