মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

পরিবারের প্রতিটি সদস্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ছোট হোক কিংবা বড়, সুস্থ হোক কিংবা অসুস্থ, সচ্ছল হোক কিংবা অসচ্ছল, পরিবারে সবারই সমান অধিকার রয়েছে। পরিবারের কেউ আর্থিক কিংবা শারীরিকভাবে দুর্বল হলে তাকে অবজ্ঞা করার কোনো সুযোগ নেই। পরিবারের জন্য খরচ করলে আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদা পাওয়া যায়। এতে সদকার সওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু তাই বলে পরিবারের দুর্বল সদস্যদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করা মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না। কথায় কথায় তাদের খোঁটা দেওয়া বা ছোট করাও অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের দান-সদকাকে পণ্ড কোরো না খোঁটা ও কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৪)

পরিবারের সুখ-সমৃদ্ধি শুধু টাকা দিয়ে আসে না। পরিবারে যে সচ্ছলতা আসে, তাও কেউ গায়ের জোরে আনতে পারে না। রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ। তিনি যাকে রিজিক দেবেন সে তা পাবে, তিনি না চাইলে রাত-দিন খেটেও পরিবারে সচ্ছলতা ফেরানোর শক্তি কারোর নেই। রিজিক কারো মানিব্যাগে নেই, এমনকি কারো ধরাছোঁয়ার মধ্যেও নেই। রিজিক বণ্টন হয় আকাশ থেকে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আকাশে রয়েছে তোমাদের রিজিক ও প্রতিশ্রুত সব কিছু।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ২২)

তাই টাকার জোরে নিজেকে পরিবারের অন্যদের প্রভু মনে করা উচিত নয়। কাউকে অবজ্ঞা করাও উচিত নয়। জুবায়ের ইবনে নুফাইর আল-হাদরামি (রহ.) বলেন, তিনি আবু দারদা (রা.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা দুর্বল লোকদের খোঁজ করে আমার কাছে নিয়ে এসো। কেননা তোমরা তোমাদের মধ্যকার দুর্বল লোকদের অসিলায় রিজিক এবং সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে থাকো।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৯৪)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, মুসআব ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন সাদ (রা.)-এর ধারণা ছিল অন্যদের চেয়ে তাঁর মর্যাদা অধিক। তখন নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা দুর্বলদের (দোয়ার) অসিলায়ই সাহায্যপ্রাপ্ত ও রিজিকপ্রাপ্ত হচ্ছ।’ (বুখারি, হাদিস : ২৮৯৬)

উল্লিখিত হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায়, পরিবারের বৃদ্ধ, শিশু, বেকারদের মাধ্যমেও মহান আল্লাহ পরিবারের রিজিকের ব্যবস্থা করে থাকেন। কারণ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য রিজিক বরাদ্দ দিয়েই তাকে সৃষ্টি করেন। সে যদি কর্মক্ষমতা নাও রাখে, তিনি অন্যদের মাধ্যমে হলেও তার কাছে তার সেই রিজিক পৌঁছে দেন। এর থেকে বোঝা যায় যে আমাদের পরিবারের দুর্বলদের অসিলায়ও অনেক সময় মহান আল্লাহ আমাদের জন্য সফলতার পথ সুগম করে দেন।

শুধু পরিবারই নয়, আমাদের আশপাশে বাস করা দুর্বল মানুষগুলোর মাধ্যমেও মহান আল্লাহ আমাদের রিজিকে বরকত দেন। তাদের চোখের পানি ও ভাঙা হৃদয়ের আরজি মহান আল্লাহর কাছে সরাসরি পৌঁছে যায়, তাই এত পাপ করার পরও মহান আল্লাহ আমাদের অনেক বড় বড় বিপদ থেকে নিরাপদে রাখেন।

আল্লাহর নবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা এই উম্মতকে সাহায্য করেন তার দুর্বলদের দ্বারা, তাদের দোয়া, নামাজ ও ইখলাসের কারণে। (নাসায়ি, হাদিস : ৩১৭৮)

অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, মাথায় উষ্কখুষ্ক চুল ও দেহে ধূলিমলিন দুইখানা পুরাতন কাপড় পরিহিত এরূপ অনেক ব্যক্তি রয়েছে, যার প্রতি লোকেরা দৃষ্টিপাত করে না। অথচ সে আল্লাহর নামে শপথ করে ওয়াদা করলে তিনি তা সত্যে পরিণত করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৫৪)

অতএব, কেউ অসচ্চল কিংবা দুর্বল হলেই তার ওপর আধিপত্য বিস্তার করা উচিত নয়। তাকে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়।

আমাদের উচিত সবাইকে ভালোবাসা, সবাইকে গুরুত্ব দেওয়া। তবেই মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত করবেন।