পবিত্র কোরআনের সর্বপ্রথম সুরা ‘আল ফাতিহা’। কিন্তু এর পূর্বে মহান আল্লাহ ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ উল্লেখ করেছেন। সুরা তাওবা ছাড়া কোরআনের সব সুরার শুরুতে বিসমিল্লাহ আছে। তা ছাড়া এটি কোরআনের স্বতন্ত্র আয়াতও বটে। রাসুল (সা.) সব কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পাঠ করতেন এবং এটিকে সব বিষয়ের জন্য বরকতের কারণ ও ফজিলতপূর্ণ মনে করতেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া হয়নি—তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।’ (মুসনাদে আহমাদ)

এ জন্য মুমিন বান্দার সব সময় সব কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পাঠ করা উচিত।

সর্বপ্রথম বিসমিল্লাহ

প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ইবনু আবু আসেম আশ-শায়বানি তাঁর ‘কিতাবুল আওয়ায়েল’ গ্রন্থে লিখেছেন, সর্বপ্রথম বিসমিল্লাহ লেখার প্রচলন শুরু করেন আল্লাহর নবী সুলাইমান (আ.)। তিনি তখন সমগ্র পৃথিবীর শাসক। এ সময় ইয়েমেনের সাবা নগরী শাসন করতেন রানি বিলকিস। রানি ও তাঁর অধীনরা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যের ইবাদত করত। হজরত সুলাইমান (আ.) তখন রানিকে দ্বিনের দাওয়াত দিয়ে একটি পত্র লিখলেন। পত্র শুরু করেছিলেন বিসমিল্লাহর মাধ্যমে। আর এভাবেই বিসমিল্লাহর প্রচলন শুরু হয়। কোরআনের বর্ণনায়, ‘সে (রানি) বলল, হে প্রধান ব্যক্তিরা, আমার সামনে একটি সম্মানিত পত্র পেশ করা হয়েছে। এটি সুলাইমানের পক্ষ থেকে এবং এটি করুণাময় ও দয়াবান আল্লাহর নামে (বিসমিল্লাহর মাধ্যমে)।’ (সুরা নামল, আয়াত: ২৯, ৩০)

রাসুলের যুগে বিসমিল্লাহ

সুলাইমান (আ.)-এর পর রাসুল (সা.) ছাড়া আর কোনো নবীকেই বিসমিল্লাহর বিধান দেওয়া হয়নি। প্রাথমিক যুগে রাসুল (সা.) ‘বিসমিকাল্লাহুম্মা’ লিখতেন। তারপর সুরা হুদের ৪১তম আয়াতে ‘বিসমিল্লাহি মাজরেহা’ নাজিল হলে তিনি শুধু ‘বিসমিল্লাহ’ লিখতে শুরু করেন। এরপর সুরা বনি ইসরাইলের ১০ নম্বর আয়াতে ‘কুলিদ উল্লাহা আওয়িদ উর রাহমান’ অবতীর্ণ হলে তিনি ‘বিসমিল্লাহির রহমান’ লিখতে শুরু করেন। এরপর সুরা নামলের ৩০তম আয়াতে পুরো বিসমিল্লাহ নাজিল হলে মহানবী পুরো ‘বিসমিল্লাহ’ লেখার রীতি প্রচলন করেন। (রুহুল মাআনি ও আহকামুল কোরআন লিল-জাস্সাস)

তবে ইবরাহিম ইবনে উকবাহ তারিখে মাক্কায় দাবি করেন, আমি খালিদ বিন সাঈদ ইবনুল আসের কন্যা উম্মে খালিদকে বলতে শুনেছি, মক্কায় তাঁর পিতা সর্বপ্রথম চিঠিতে বিসমিল্লাহ লিখেন।

বিসমিল্লাহ নিয়ে সংক্ষিপ্ত কথা

বিসমিল্লাহ চার শব্দবিশিষ্ট বিশেষ এক বাক্য। আরবিতে একক শব্দে একে ‘বাসমালাহ’ বলা হয়। তাতে মহান ‘আল্লাহ’ শব্দ ছাড়াও তাঁর আরো দুটি গুণবাচক নাম রয়েছে। প্রথমটি আর রহমান, অর্থ-অতি দয়াময়। ভাষাবিদদের মতে, সামগ্রিক দয়া ও অনুগ্রহের অধিকারী এমন মহান এক সত্তা, যার অনুগ্রহ ও দয়া সব সময় সবার ওপর বিদ্যমান; মুসলিম, অমুসলিম সবাই। তবে এটা শুধু দুনিয়ায়। আর রহিম শব্দের ব্যাপারে তাদের অভিমত হলো, এর অর্থ চিরদয়ালু, যার দয়া কখনো শেষ হবে না। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর ওপর বিশ্বাস স্থাপনকারীদের জন্য চিরকাল অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতে তাঁর অনুগ্রহ অবশিষ্ট থাকবে।

     আল মাউদু অবলম্বনে।