মাওলানা আবদুর রশিদ

ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে সম্পর্ক গভীর হয়। সর্বোত্তম ইবাদত হলো নামাজ। নামাজ হলো অন্যতম ফরজ। নামাজকে সঠিক করতে হলে আরেকটি ফরজের প্রয়োজন। আর তা হলো হালাল খাওয়া। ইবাদত কবুল করাতে হলে হারামকে পরিহার করতে হবে এবং হালালকে গ্রহণ করতে হবে। তা যত কঠিন হোক।

‘তুমি আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে কর, যেন তুমি তাকে দেখছ। আর এমন ভাব যদি তোমার মধ্যে সৃষ্টি না হয় তাহলে কমপক্ষে এ কথা মনে কর যে, আল্লাহ তোমাকে দেখছেন।’ (মুসলিম)।মোল্লা আলী কারি (রহ.) রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস (হে আদমসন্তান! তুমি আমার ইবাদতে আত্মনিয়োগ কর)-এর অর্থ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, অর্থাৎ, তুমি তোমার প্রভুর ইবাদত করার সময় মন-দিল উপস্থিত রাখার ব্যাপারে খুব চেষ্টা কর। (মিরকাতুল মাফাতিহ ৭/২৬)।
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ বলেছেন, (হাদিসে কুদসি) হে আদমসন্তান! আমার ইবাদতে আত্মনিয়োগ কর, আমি তোমার হƒদয়কে অভাবমুক্ত করে দেব এবং দরিদ্রতা দূর করে দেব। আর যদি তা না কর, তাহলে কর্মব্যস্ততা দ্বারা তোমার হাত ভরে দেব। আর দরিদ্রতাও দূর করব না। (আল মুসনাদ ১৬/২৮৪ তিরমিজি, আবওয়াবুস সিফাতিল কিয়ামাহ)।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওই হাদিসে বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করবে তাকে দুটি পুরস্কার দেওয়া হবে। পক্ষান্তরে যে তা করবে না তাকে দুই প্রকার শাস্তি দেওয়া হবে। পুরস্কার দুটি হচ্ছে-  হৃদয়কে অভাবমুক্ত করে দেওয়া এবং দরিদ্রতা দূর করা। আর শাস্তি দুটি হলো-  কর্মব্যস্ততার দ্বারা হাত ভরপুর করা ও দরিদ্রতা দূর না করা।

ইমাম হাকেম হজরত মাকাম ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, (হাদিসে কুদসি) (মুসতাদরাক হাকিম হা/৭৯২৬) হে বনি আদম! আমার ইবাদতে আত্মনিয়োগ কর। বিনিময়ে আমি তোমার মনকে অভাবমুক্ত করে দেব। আর তোমাকে রিজিক দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেব। হে বনি আদম! আমা হতে দূরে সরে যেও না, যদি যাও তাহলে আমি তোমাদের মনকে অভাবী করে দেব আর কর্মব্যস্ততায় ভরে দেব। (মুসতাদরাক ৪/৩২৬)

ওই হাদিসের মধ্যেও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর ইবাদাতে আত্মনিয়োগকারীর জন্য দুটি পুরস্কার রয়েছে, আর যে আল্লাহ থেকে দূরে সরে যাবে তার জন্য দুটি শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। পুরস্কার দুটি হচ্ছে-  মনকে অভাবমুক্ত করে দেওয়া ও হাতকে রিজিক দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেওয়া। আর শাস্তি দুটি হচ্ছে- মনকে অভাবী করে দেওয়া এবং হাতকে কর্মব্যস্ততার দ্বারা পূর্ণ করে দেওয়া।

আর এ তো স্পষ্ট কথা যে, আল্লাহ যার মনকে ধনী করে দেবেন, অভাব তার কাছেও আসতে পারবে না। কুলজাহানের রিজিকদাতা আল্লাহ যার হাতকে রিজিক দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেবেন সে কখনো রিজিকের জন্য কষ্ট পাবে না। পক্ষান্তরে সর্বশক্তিমান প্রভু যার দিলকে অভাবী করে দেবেন কোনো শক্তি তাকে অভাবহীন করতে পারবে না। আর মহাপরাক্রমশালী বাদশাহ যার হাতকে কর্মব্যস্ততার দ্বারা পূর্ণ করে দেবেন কোনো শক্তি তাকে এর থেকে বের করতে পারবে না।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা হজ ও ওমরায় মুতাবায়াত কর। কারণ এ দুটি অভাব ও গুনাহকে এমনভাবে দূর করে দেয়, যেমন রেত লোহার মরিচা দূর করে দেয়। অনুরূপ সোনা-রুপাকেও পরিষ্কার করে দেয়। আর হজে মাবরুরের বদলা বা প্রতিদান একমাত্র বেহেশত। (ফাতহুল কাবির)।

ইমাম তিবি (রহ.) এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, সদকাহ যেভাবে মাল বৃদ্ধি করে, অনুুরূপভাবে হজ ও ওমরাহ গুনাহ এবং অভাবকে দূর করে।

ইমাম নাসায়ি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সুতরাং যারা নিজেদের গুনাহ ও অভাব দূর করতে অধিক আগ্রহী তারা যেন হজ ও ওমরাহর মুতাবায়াত তাড়াতাড়ি করে। যখনই হজ করবে তখনই ওমরাহ পালন করবে বা যখনই ওমরাহ পালনে যাবে তখনই হজ পালন করবে।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।