দয়াময় (আল্লাহ) আরশে সমাসীন [সুরা : ত্বহা, আয়াত : ৫ (দ্বিতীয় পর্ব)]
তাফসির : আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ আরশের অধিপতি। এই নিখিল জাহান সৃষ্টি করার পর তিনি নিজেকে গুটিয়ে নেননি। বরং গোটা সৃষ্টিজগৎ তিনি নিজেই পরিচালনা করছেন। এই সীমাহীন রাজ্যের তিনি রাজাধিরাজ। তিনি শুধু স্রষ্টাই নন, তিনি শাসকও!
আলোচ্য আয়াতে মহান আল্লাহর আরশ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। আরশ মহান আল্লাহর বৃহত্তম সৃষ্টি। এর ওপর রাব্বুল আলামিন তাঁর মর্যাদা ও অবস্থান অনুযায়ী সমাসীন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মহিমান্বিত আল্লাহ, যিনি প্রকৃত মালিক, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি সম্মানিত আরশের অধিপতি।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১১৬)। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘…তিনি মহা আরশের অধিপতি।’ (সুরা : তওবা, আয়াত : ১২৯)
শেষোক্ত আয়াতের অধীনে তাফসিরবিদ আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লিখেছেন, ‘মহান আল্লাহ সব কিছুর মালিক ও স্রষ্টা। কেননা তিনি মহান আরশের অধিপতি, যা সৃষ্টিজগতের ছাদস্বরূপ। আসমান-জমিন ও উভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছু আল্লাহর কুদরতে আরশের নিচে বিদ্যমান। আল্লাহর জ্ঞান সব কিছু ঘিরে আছে। সব কিছুর ওপর তাঁর কুদরত কার্যকর। তিনি সব কিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ২/৪০৫)
একদল শক্তিমান ফেরেশতা মহান আল্লাহর আরশকে ধারণ করে আছেন। তাঁদের সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চতুষ্পার্শ্ব ঘিরে আছে, তারা তাদের রবের সপ্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং তারা তাঁর প্রতি ঈমান আনে…।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৭)
জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমাকে আরশ ধারণকারী ফেরেশতাদের সম্পর্কে বলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এমন যে তাঁদের কানের লতি থেকে গর্দানের শেষ সীমানার মধ্যবর্তী স্থানে দ্রুতগামী ঘোড়ার ৭০০ বছরের দূরত্ব রয়েছে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭২৭)
হাদিসবিদ ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) লিখেছেন, ‘হাদিসটির সনদের সূত্র সহিহ।’ (ফাতহুল বারি : ৮/৬৬৫)
অন্যদিকে আল্লাহর কুরসি সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘…তাঁর কুরসি আকাশ ও পৃথিবীময় পরিব্যাপ্ত…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৫)
আরশ ও কুসরি কি এক—এ প্রশ্ন নিয়ে তাফসিরবিদদের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দেখা যায়। তবে বিশুদ্ধ কথা হলো, আরশ ও কুরসি এক নয়। এ বিষয়ে ইবনে আব্বাস (রা.)-এর একটি বক্তব্য পাওয়া যায়। ইবনে আবি শায়বা (রহ.) তাঁর ‘সিফাতুল আরশ’ নামক গ্রন্থে এবং হাকিম (রহ.) তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থে সাঈদ বিন জুবাইরের সূত্রে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, কুরসি হলো মহান আল্লাহর কুদরতি কদম (পা) মুবারক রাখার স্থান।
আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আল্লাহর আরশের তুলনায় কুরসি এত ছোট যে তা যেন একটি বিশাল মরুভূমিতে পড়ে থাকা আংটির মতো।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ১/১৪)
আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লিখেছেন, এই বর্ণনার সূত্র বিশুদ্ধ।
কুরসি হলো ওই আংটিতুল্য। আর ওই মরুভূমি হলো আরশতুল্য। অথচ কুরসিটাই আকাশ ও পৃথিবীময় পরিব্যাপ্ত। তাহলে আল্লাহর আরশ কত বড়!