মো. আবদুল মজিদ মোল্লা

মহান আল্লাহ মানবজাতিকে পরীক্ষা করার জন্য শয়তান সৃষ্টি করেছেন। মানুষের সঙ্গে শয়তানের শত্রুতা আদম (আ.)-এর সৃষ্টির সময় থেকেই শুরু হয়েছে। এই শত্রুতা এড়ানো অসম্ভব। এর মাধ্যমে আল্লাহ মানুষের ঈমানের শক্তি ও সততার পরীক্ষা নেন। শয়তান নানা কৌশলে মানুষকে প্রতারিত করতে চায় এবং ঈমানের দুর্বলতার কারণে সে তাতে আক্রান্ত হয়। ফলে সে আল্লাহর স্মরণ ও ইবাদত থেকে বিমুখ হয়ে যায় এবং আল্লাহর আনুগত্য করতে ভালো লাগে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সে বলল, আপনি আমাকে যে শাস্তি দিয়েছেন সে জন্য আমি আপনার সরল পথে তাদের জন্য ওত পেতে থাকব। অতঃপর আমি তাদের কাছে আসব তাদের সামনে, পেছনে, বাম ও ডান দিক থেকে। আপনি তাদের বেশির ভাগকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৬-১৭)

শয়তানের এমন বক্তব্যের বিপরীতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের আত্মরক্ষার উপায় বাতলে দিয়েছেন। শয়তানের ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে আত্মরক্ষার কয়েকটি উপায় এখানে তুলে ধরা হলো—

১. আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা

আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া হলেই শুধু মানুষ শয়তানের প্রতারণা থেকে বাঁচতে পারবে। কোরআন ও হাদিসে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২০০)

২. প্রতিটি কাজে আল্লাহকে স্মরণ করা

প্রতিটি কাজে আল্লাহর স্মরণ মানুষকে শয়তানের প্রতারণা ও প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারে। আর তার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো বিসমিল্লাহ বলে কাজ শুরু করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “শয়তান ধ্বংস হোক—এ কথা বোলো না। কেননা যখন তুমি ‘শয়তান ধ্বংস হোক’ বলো তখন তার আত্মগরিমা বেড়ে যায়। সে বলে, আমি আমার শক্তিতে অপ্রতিরোধ্য। যখন তুমি বিসমিল্লাহ বলো তখন তার ভেতর হীনম্মন্যতা তৈরি হয়, এমনকি সে মাছির থেকেও ছোট হয়ে যায়।” (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস : ১১৫)

৩. যথাযথভাবে নামাজ আদায় করা

মানুষের জীবনে নামাজের অনেক ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে; যার একটি হলো তার ঈমানি শক্তি বৃদ্ধি পায়। ফলে সে শয়তানের প্রতারণা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। বিশেষত, জামাতে নামাজ আদায় করার বিশেষ উপকারিতা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো গ্রামে বা বিরানভূমিতে তিনজন ব্যক্তি থাকে এবং তারা সেখানে নামাজ কায়েম করে না তখন শয়তান তাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে। তোমরা জামাতে নামাজ আদায় কোরো। কেননা বাঘ দুর্বল প্রাণীকে খেয়ে ফেলে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫৪৭)

৪. নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করা

নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত শয়তানের শক্তি খর্ব করে। বিশেষত, কোরআনের যেসব আয়াত শয়তানের প্রভাব থেকে মানুষকে রক্ষা করে বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন—সুরা বাকারার প্রথম ও শেষ অংশ, আয়াতুল কুরসি, সুরা সামাদ, সুরা নাস ও ফালাক ইত্যাদি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো আদমসন্তান সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে এবং সিজদা দেয় তখন শয়তান তার থেকে দূরে সরে যায় এবং কেঁদে কেঁদে বলে, হায় আফসোস! আদমসন্তানকে সিজদার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সে সিজদা দিল। ফলে তার জন্য জান্নাত। আর আমাকে সিজদার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, আমি তা অস্বীকার করি। ফলে আমার জন্য জাহান্নাম।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮১)

৫. নিষ্ঠার সঙ্গে ইবাদত করা

ইবাদতে মানুষের নিষ্ঠা বা ইখলাসের কারণে মানুষ শয়তানের প্রভাব থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে বলল, হে আমার প্রভু, আপনি যে আমাকে বিপথগামী করলেন এ জন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের কাছে পাপকাজকে সুশোভিত করে তুলব এবং তাদের সবাইকে বিপথগামী করব। তবে তাদের মধ্য থেকে যারা নিষ্ঠাবান (তারা এর ব্যতিক্রম)।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৩৯-৪০)

লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা