কাপড় ধোয়ার কেমিক্যাল বা রাসায়নিক আমদানির নামে এক কন্টেইনারে পুরোটাই দামি ব্রান্ডের কসমেটিকস নিয়ে এসেছে ঢাকার আমদানিকারক ফাতেমা ইন্টারন্যাশনাল। ৪০ ফুট দীর্ঘ এই কন্টেইনারটি জাহাজ থেকে নামিয়ে আটমাস চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে পড়েছিল। আমদানিকারক চেয়েছিল কাস্টমস ও বন্দরের চোরাচালান চক্রকে ম্যানেজ করে কৌশলে চালানটি বের করতে; কিন্তু কাস্টমস গোয়েন্দা দলের কঠোর নজরদারির কারণে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। 

পরে আজ মঙ্গলবার বন্দরের ইয়ার্ড থেকে জোর করে (ফোর্সড কিপ ডাউন) কন্টেইনারটি নামিয়ে গোয়েন্দা দল প্রাথমিক পরীক্ষার পর কসমেটিকস থাকার প্রমাণ পান। এখন সব পণ্য কনেটইনার থেকে বের করে কায়িক পরীক্ষা বা গণনা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে এই একটি কন্টেইনারে অন্তত চার কোটি টাকার কসমেটিকস থাকতে পারে।

জানতে চাইলে আটকের বিষয় নিশ্চিত করে কাস্টমস গোয়েন্দা দল প্রধান ও সহকারী কমিশনার নুর এ হাসনা সানজিদা অনুসুয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০১৯ সালের ২১ মে চালানটি জাহাজ থেকে নেমে বন্দর ইয়ার্ডে রাখা হয়। গোপন তথ্য থাকায় আমরা চালানটি ছাড় বন্ধ করতে লক বা আটকে দিই। এরপর থেকে এক-দুইমাস করে আটমাস পেরিয়ে গেলেও আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এর হদিস নেই। চালানটিও ছাড় নিচ্ছে না। সন্দেহ আরও ঘনীভূত হলে আমরা আজ মঙ্গলবার কন্টেইনার নামিয়ে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিই। পরে দেখি বিদেশি বিভিন্ন ব্রান্ডের কসমেটিকস। কিন্তু চালানে ঘোষিত পণ্যের সন্ধান মিলেনি।’

সহকারী কমিশনার বলেন, কী পরিমাণ শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়েছে তা জানা যাবে সব পণ্য গণনার পর। সেই কাজ করতে গভীর রাত হয়ে যাবে। তবে আমরা ধারণা করছি এতে বড় ধরনের শুল্কফাঁকির চেষ্টা হয়েছে। কারণ ঘোষিত পণ্যের শুল্কহার মাত্র ৫৩ শতাংশ আর কসমেটিকস পণ্যের শুল্কহার ১২৭ শতাংশ।    

জানা গেছে, ঢাকা শহীদ জননী জাহানারা ইমাম সড়কে ইসমাইল ম্যানশন সুপার মার্কেটের আমদানিকারক ‘ফাতেমা ইন্টারন্যাশনাল’। প্রতিষ্ঠানটি থাইল্যান্ড থেকে ক্লিনিং এন্ড ওয়াশিং প্রিপারেশন আমদানির জন্য ঢাকা ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ২০ হাজার ৬২৫ মার্কিন ডলারের ঋণপত্র খুলেন। চালানটি মেরিন তারাবা জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে ২০১৯ সালের মে মাসে। এরপর আমদানিকারকের নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট চট্টগ্রামের পানওয়ালা পাড়ার ‘ওএসএল ট্রেড প্রাইভেট লিমিটেড’ গত ২১ মে ২০১৯ সালে চালানটি শুল্কায়নের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি জমা দেয়। সে অনুযায়ী পণ্যের ৫৩ শতাংশ শুল্ক হিসেবে ১০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা রাজস্ব জমা দেয়। কিন্তু পণ্য ছাড়ের অনুমতি নিতে গিয়ে দেখা যায় চালানটি লক বা কাস্টমসের অনুমতি ছাড়া ছাড়ের সুযোগ নেই। এরপর দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকে আমদানিকারক ফাতেমা ইন্টারন্যাশনাল ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট চট্টগ্রামের ওএসএল ট্রেড প্রাইভেট লিমিটেড। কাস্টমসের বিভিন্ন পর্যায়ে ম্যানেজ করে চালানটি খালাসের চেষ্টা করতে থাকে, একইসাথে চালানটি বন্দর থেকে অবৈধভাবে বের করার জন্য কৌশল খুঁজতে থাকে। কিন্তু বর্তমান কাস্টমস কমিশনারের কঠোরতার কারণে কিছু অসাধু কাস্টমস কমকর্তা সেই সুযোগ নিতে পারেননি। এই অবস্থায় কাস্টমস গোয়েন্দা দলও নজরদারি বাড়ায় যাতে অন্যকোনভাবে চালানটি বের হয়ে যেতে না পারে। গত মে মাস থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা শেষে আজ মঙ্গলবার কন্টেইনারটি খুলে কায়িক পরীক্ষার শুরু হয়। এতে বড় ধরনের অনিয়মের বিষয় ধরা পড়ে। 

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, চালানটিতে কার্টনভর্তি পাউডার, ক্রিম, লোশন, ফেসওয়াশ, শাওয়ার জেল, বডি স্প্রে, পারফিউম, এয়ার ফ্রেশনার, তেলসহ বিভিন্ন ধরনের কসমেটিকস সামগ্রী রয়েছে। 

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট দেওয়ানহাটের ওএসএল প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক লুত্ফুজ্জামানের মোবাইলে কল করা বন্ধ পাওয়া যায়। আর অফিসের ল্যান্ডফোনে কল করা হলেও কেউ সাড়া দেয়নি। ফলে তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।