প্রত্যেক প্রাণীকে অবশ্যই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৮৫, সুরা আম্বিয়া : ৩৫, সুরা আনকাবুত : ৫৭)। মুমিনের মৃত্যু আর অন্যদের মৃত্যু এক রকম নয়। আল্লাহ তাআলা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বলেছেন, ‘আপনি বলুন, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য।’ (সুরা আনআম : ১৬২)

একজন মুমিনের স্বীকৃতি এটিই যে আমার সকল কাজ এবং জীবন-মরণ আল্লাহর জন্য নিবেদিত। আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন, ‘তিনি জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন।’ (সুরা তাওবা : ১১১)। মুমিনের কামনা-বাসনা হলো শহীদি মৃত্যু। কেননা মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল অথচ জিহাদ করেনি এমনকি মনে জিহাদের তথা শহীদি মৃত্যুর চিন্তাও করেনি, সে যেন মুনাফেকির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল। (সহিহ মুসলিম)

শহীদি মৃত্যু দুই প্রকার। এক প্রকার হলো প্রকৃত শহীদ। তা হলো, দ্বিন কায়েমের জন্য কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন দেওয়া। এ ধরনের শহীদের মর্যাদা অনেক বেশি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।’ (সুরা আল-বাকারা : ১৫৪)

আরেক প্রকারের শহীদ হলো, হুকুমি। অর্থাৎ তারা শহীদের সাওয়াবপ্রাপ্ত হবেন। তারা হলেন, প্লেগ, মহামারি ইত্যাদিতে মৃত্যুবরণকারী। তারা শহীদের মর্যাদা লাভ করবে। এ প্রসঙ্গে ইরবাদ ইবনে সারিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, শহীদ ও বিছানায় মৃত্যুবরণকারী আল্লাহ তাআলার সঙ্গে মহামারিতে মৃত্যুবরণকারীর ব্যাপারে বিতর্ক করে। শহীদ বলে, আমাদের ভাইয়েরা আমাদের মতোই মৃত্যুবরণ করেছে, সুতরাং তাদের আমাদের মতো মর্যাদা দান করুন। আর বিছানায় মৃত্যুবরণকারীরা বলবে আমাদের ভাইয়েরা আমাদের মতো মৃত্যুবরণ করেছে। সুতরাং তাদের আমাদের মতো সম্মান দেওয়া হোক। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, মহামারিতে মৃত্যুবরণকারীদের আঘাতের দিকে তাকাও। যদি শহীদদের আঘাতের মতো তাদের আঘাত থাকে, তাহলে তারা শহীদের মর্যাদা পাবে। অতঃপর দেখা যাবে যে মহামারিতে মৃত্যুবরণকারীদের আঘাত শহীদদের আঘাতের মতো। ফলে তাদের শহীদের মর্যাদা দেওয়া হবে (মুসনাদ আহমদ, নাসারী, মিশকাত : হাদিস : ১৫৯৬)। জাবের (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মহামারি থেকে দূরে থাকা, ভয় করা, পালানোর চেষ্টা করা যুদ্ধের ময়দান থেকে পালানোর মতো। অর্থাৎ কবিরা গুনাহ। যে ব্যক্তি মহামারিতে মৃত্যুবরণ করল অথবা ধৈর্যধারণ করল সে শহীদের সমান পুণ্য লাভ করবে। (মুসনাদ আহমদ, মিশকাত : ১৫৯৭)

আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শহীদ পাঁচ প্রকার। যেমন—১. প্লেগ বা মহামারিতে মৃত্যুবরণকারী, ২. পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী, ৩. পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী, ৪. কুপে পড়ে মৃত্যুবরণকারী ও ৫. আল্লাহর রাস্তায় শহীদ (বুখারি ও মুসলিম)

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় নিহত হওয়া ছাড়া শহীদ সাতজন। যেমন—১. প্লেগে মৃত্যুবরণকারী, ২. পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী, ৩. আঘাতে মৃত্যুবরণকারী, ৪. পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী, ৫. আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণকারী, ৬. কূপে পড়ে মৃত্যুবরণকারী ও ৭. সন্তান প্রসব যন্ত্রণায় মৃত্যুবরণকারী নারী। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। (ইবনে মাজাহ)

লেখক : প্রধান ফকিহ

আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী।