এমন কিছু মানুষ আছে, যারা কিয়ামত দিবসে দয়াময় আল্লাহর সুদৃষ্টি থেকে বঞ্চিত থাকবে, তিনি তাদের দিকে তাকাবেন না, আর না তাদের প্রতি সুনজর দেবেন। তাদের সংখ্যা অনেক।
যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার ও শপথকে তুচ্ছ বিনিময়ে বিক্রয় করে : আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, এরা আখিরাতের কোনো অংশই পাবে না এবং আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদের পবিত্র করবেন না, বস্তুত তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৭৭)
উপকার করে খোঁটা দানকারী : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, তিন ধরনের লোক এমন আছে, মহান আল্লাহ যাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, কিয়ামতের দিন তাদের দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না এবং তাদের পবিত্র করবেন না; বরং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। আমি (আবু হুরাইরা) বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, তারা কারা? ওরা তো ক্ষতিগ্রস্ত! তিনি বলেন, টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী, ব্যবসার সামগ্রী মিথ্যা শপথ দিয়ে বিক্রয়কারী এবং কাউকে কিছু দান করার পর তার খোঁটা দাতা।’ (মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, হাদিস নম্বর : ২৯৪)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘লুঙ্গির যে পরিমাণ অংশ টাখনুর নিচে থাকবে, ওই পরিমাণ জাহান্নামে যাবে।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর ৫৭৮৭)
পোশাকের মাধ্যমে অহংকার ও বড়ত্ব প্রকাশকারী : আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তির দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না, যে অহংকারবশত পোশাক প্রলম্বিত (ও প্রদর্শিত) করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৮৫৬)
বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক ও অহংকারী দরিদ্র : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির লোকের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না এবং তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেবেন না। তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। তারা হলো, বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক ও অহংকারী দরিদ্র।’ (মুসলিম শরিফ, ঈমান অধ্যায়, হাদিস নম্বর : ২৯৬)
বিশেষভাবে তাদের ব্যাপারে উপরোক্ত শাস্তি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করার কারণ সম্পর্কে কাজি ইয়াজ বলেন, ‘তাদের প্রত্যেকের পাপমুক্ত থাকার বিশেষ সুযোগ রয়েছে। যদিও কোনো পাপীর পাপের অজুহাত গ্রহণীয় নয়; কিন্তু এ কথা বলা যেতে পারে যে ওই পাপ করার ক্ষেত্রে তাদের অতীব প্রয়োজন ছিল না। তা সত্ত্বেও তাদের ওই পাপে লিপ্ত হওয়া আল্লাহর অধিকারকে তুচ্ছ মনে করার শামিল। তাই তাদের জন্য এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।
রুকু ও সিজদার মাঝখানে যারা মেরুদণ্ড সোজা করে না : ত্বলাক বিন আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন ওই নামাজির দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না, যে রুকু ও সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে দাঁড়ায় না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৫)
মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, নারী হয়ে পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী ও দাইয়ুস : আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিন ধরনের মানুষের দিকে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন দৃষ্টিপাত করবেন না। মাতা-পিতার অবাধ্য, পুরুষের সদৃশ অবলম্বনকারী নারী এবং দাইয়ুস। আর তিন প্রকার লোক জান্নাতে যাবে না। মাতা-পিতার অবাধ্য, মদ পানে আসক্ত এবং অনুদানের পর খোঁটাদাতা।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস নম্বর : ৬১১)
মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তানের বিষয়টি স্পষ্ট। কারণ আল্লাহ তাআলা মাতা-পিতার অধিকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি নিজ অধিকারকে তাদের অধিকারের সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন এবং তাদের উভয়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার আদেশ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার রব তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের ‘উফ’ বোলো না এবং তাদের ধমক দিয়ো না। তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বোলো।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৩)
নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মাতা-পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তাঁদের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস নং ১৯৬২)
পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী বলতে ওই নারীকে বোঝায়, পোশাক-পরিধানে, চালচলনে, কাজে-কর্মে এবং কথার স্বরে যারা পুরুষের অনুকরণ করে।
আর দাইয়ুস হচ্ছে, যে নিজ পরিবারে অশ্লীলতা প্রশ্রয় দেয়, তাদের সম্ভ্রম রক্ষায় আত্মসম্মানী নয়, সে মানবিকতাহীন, অপুরুষত্ব, অসুস্থ মস্তিষ্ক এবং দুর্বল ঈমানের অধিকারী।
দাইয়ুস ওই ব্যক্তি, যার স্ত্রীর কাছে পর-পুরুষ প্রবেশ করে, অথচ সে কিছুই মনে করে না; বরং চুপ থাকে। ইমাম জাহাবি (রহ.) বলেছেন, ‘দাইয়ুস’ ওই ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর অশ্লীল কাজ সম্পর্কে অবগত। কিন্তু তার প্রতি ভালোবাসার কারণে সে ব্যাপারে উদাসীন থাকে। অথবা তার ওপর তার স্ত্রীর বৃহৎ ঋণ বা অন্য কোনো দুর্বলতার কারণে সে স্ত্রীকে কিছুই বলে না। প্রকৃতপক্ষে ওই ব্যক্তির আত্মসম্মানবোধ বলতে কিছুই নেই। (ইমাম জাহাবি, কিতাবুল কাবায়ের : ১/৫০)
দাইয়ুস ব্যক্তির পরিণতি সম্পর্কে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘দাইয়ুস কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (নাসাঈ, হাদিস : ২৫৬২)
সমকামী : আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তির দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না, যে ব্যক্তি পুরুষের সঙ্গে কিংবা স্ত্রীর সঙ্গে পায়ুপথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে।’ (তিরিমিজি, হাদিস নম্বর : ১১৭৬)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন।