মুফতি আব্দুল্লাহ আল ফুআদ
পারস্পরিক ভালোবাসা, আন্তরিকতা ও সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সবাই চেষ্টা করে, কিন্তু মানুষের মৌখিক কিছু মন্দ স্বভাবের কারণে সেই চেষ্টা সফল হয় না। সুসম্পর্ক একসময় দুঃসম্পর্কে রূপ নেয়। নানা রকম ঝগড়া ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, যার মূলে থাকে সেসব মন্দ আচরণ ও কুস্বভাব। ব্যক্তিগত আচরণে বর্জনীয় সেই পাপগুলো নিয়ে আজকের এই লেখা।
পরনিন্দা করা
পরনিন্দা বা দোষচর্চা সমাজে সম্পর্কহীনতা ও হানাহানির পরিবেশ তৈরি করে। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এই ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত থাকতে আদেশ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের কেউ যেন কারো পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি স্বীয় মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই করো।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)
আবু হুরায়রা (রা.) রাসুল (সা.)-এর কাছে জানতে চাইলেন, এটা কিরূপে? তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তাওবা করলে তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু যে গিবত করে তার গুনাহ প্রতিপক্ষ মাফ না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১২)
অশ্লীল গালি দেওয়া
কারো প্রতি ক্ষিপ্ত হলে তাকে গালি দিয়ে রাগ প্রশমিত করতে চাই আমরা। এটা নিন্দনীয়। মারাত্মক গুনাহ। রাসুল (সা.) এ ব্যাপারে স্বীয় উম্মতদের সর্তক করেছেন। আবু জর (রা.) বলেন, ‘একবার আমি জনৈক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিলাম এবং আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম। তখন রাসুল (সা.) আমাকে বলেন, আবু জর! তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ? তুমি তো এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে এখনো অন্ধকার যুগের স্বভাব বিদ্যমান। জেনে রেখো, তোমাদের দাস-দাসী তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাআলা তাদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৬৬১)
অনর্থক কথা বলা
যেখানে সেখানে অপ্রয়োজনে কথা বলার দ্বারা ব্যক্তিত্ব হালকা হয়ে যায়। সমাজে তার মূল্যায়ন কমতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে অনর্থক কথায় অযাচিত বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। তাই ইসলামে একে অসুন্দর আখ্যায়িত করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের জন্য ইসলামের সৌন্দর্য হচ্ছে তার অনর্থক কথাবার্তা পরিহার করা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৯৭৬)
কারো সামনে কানাকানি করা
কোথাও তিনজন লোক থাকলে একজনকে বাদ দিয়ে দুজনে কানাকানি করা ইসলামে নিষেধ। এতে তৃতীয় ব্যক্তি মনঃক্ষুণ্ন হয়। পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি তাদের দেখো না, যাদের কানাঘুষা করতে নিষেধ করা হয়েছিল। অতঃপর তারা সেই নিষিদ্ধ কাজেরই পুনরাবৃত্তি করে।’ (সুরা : মুজাদালাহ, আয়াত : ৮)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা তিনজন থাকবে, তখন তৃতীয়জনকে ছেড়ে তোমরা গোপনে পরামর্শ কোরো না তার অনুমতি ছাড়া। কেননা সেটি তাকে দুঃখ দেবে।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৬৩৩৮)
কাউকে উপহাস ও মন্দ নামে ডাকা
কাউকে উপহাস করা কিংবা মন্দ নামে ডাকা ইসলামে নিষিদ্ধ। এতে হিংসা-বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায়। অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, যার পরিণতি হয় ভয়াবহ। তাই এসব মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসী! কোনো সম্প্রদায় যেন কোনো সম্প্রদায়কে উপহাস না করে। হতে পারে তারা তাদের চাইতে উত্তম। আর নারীরা যেন নারীদের উপহাস না করে। হতে পারে তারা তাদের চাইতে উত্তম। তোমরা পরস্পরের দোষ বর্ণনা কোরো না এবং একে অন্যকে মন্দ উপনামে ডেকো না। বস্তুত ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা হলো ফাসেকি কাজ। যারা এ থেকে তাওবা করে না, তারা সীমা লঙ্ঘনকারী।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১১)
অন্যের সম্পর্কে কু-ধারণা করা
অন্যের প্রতি কু-ধারণা মারাত্মক পাপ। এতে অযথা পারস্পরিক সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি হয়। ভুল-বোঝাবুঝি থেকে একপর্যায়ে তা ঝগড়া ও সম্পর্কহীনতায় রূপ নেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা অধিক ধারণা করা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা কোনো কোনো ধারণা পাপ…।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে উল্লিখিত বদ-অভ্যাসগুলো ত্যাগ করার তাওফিক দান করুন।
লেখক : মুদাররিস, মারকাজুত তাকওয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা।